বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ০২:৩৩ অপরাহ্ন

কে হচ্ছেন নতুন প্রধান বিচারপতি

কে হচ্ছেন নতুন প্রধান বিচারপতি

স্বদেশ ডেস্ক:

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৩১ আগস্ট। তবে দেশের ২৩তম এই প্রধান বিচারপতি অবসরে যাবেন আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর। সুপ্রিম কোর্টে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় গত বৃহস্পতিবার ছিল তার বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস। ওই দিন আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচার কক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয়।
প্রধান বিচারপতির বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এখন কে হচ্ছেন দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি তা নিয়ে আইনাঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা।

অতীতের রেওয়াজ অনুযায়ী দেখা গেছে, প্রধান বিচারপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক দিন আগে ফাইল চূড়ান্ত করে সরকার নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ দান করিবেন। রাষ্ট্রপতি চাইলে আপিল বিভাগের যেকোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন।’
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আরো ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন। জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে এই ছয়জন হলেন- বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো: আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম।

রেওয়াজ অনুযায়ী এই ছয়জন বিচারপতির মধ্য থেকে যেকোনো একজন হতে যাচ্ছেন দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি। তবে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে বেশি শোনা যাচ্ছে বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নাম। বর্তমান প্রধান বিচারপতির পর তিনিই আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি। বর্তমানে আপিল বিভাগের ২ নম্বর বেঞ্চে তার নেতৃত্বে বিচারকাজ পরিচালিত হচ্ছে। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার নেতৃত্বাধীন সার্চ কমিটির সুপারিশের আলোকে বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে জেলা আদালত, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগ এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৯ সালের ৩০ জুন তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১১ সালের ৬ জুন স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হলে সিনিয়রিটি লঙ্ঘনের কোনো বিতর্ক উঠবে না।

আর বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পরই আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বোরহান উদ্দিন। পরবর্তী চারজন বিচারপতির মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো: আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি মো: আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম।

সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাদের মধ্য থেকে যে কাউকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারেন। সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলে রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হলে ক্ষেত্রমতে অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত বা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার আবার গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করবেন।
তবে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে অতীতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে বিএনপি সরকারের সময় দু’বার, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে একবার এবং আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছয়বার জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে।

২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীকে নিয়োগ না দিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এ নিয়োগের পর বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী আর বিচারকাজে অংশ নেননি। তিনি একাধিকবার ছুটি নিয়ে অবসরে যান। ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়াকে নিয়োগ না দিয়ে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করেন বিচারপতি আবদুল ওয়াহাব মিয়া।

অন্য দিকে ২০১০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের পরও বিচারপতি ফজলুল করিম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি অবসরে যান ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর। এরপর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম এ মতিনকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ না দিয়ে তার পরের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়।
বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে যান ২০১১ সালের ১৭ মে। ২০১১ সালের ১১ মে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ সময় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারক ছিলেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান। এরপর ১২ মে তিনি পদত্যাগ করেন।

এ ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি হলে প্রধান বিচারপতি হতে পারেন আপিল বিভাগের দ্বিতীয় সিনিয়র বিচারপতি বোরহানউদ্দিন। তিনি ১৯৮৫ সালের ৩ মার্চ জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৮৮ সালের ১৬ জুন তিনি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হন। ২০০২ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হন। ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর বিচারপতি হিসেবে স্থায়ী হন। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি।

আর আপিল বিভাগের তৃতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। তিনিও হতে পারেন নতুন প্রধান বিচারপতি। তার প্রধান বিচারপতি হওয়া নিয়ে আইনাঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ১৯৮৬ সালের ১০ অক্টোবর আইন পেশায় যুক্ত হন। ১৯৮৯ সালের ২ জানুয়ারি তিনি হাইকোর্ট বিভাগ এবং ২০০২ সালের ১৫ মে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৫ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক নিযুক্ত হন। ২০০৯ সালে নিযুক্ত হন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল। একই বছর ৩০ জুন তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। দুই বছর পর এ পদে স্থায়ী হন। ২০১৪ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারি তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। ২০২২ সালের ৯ জানুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি নিযুক্ত হন।

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877